ফুড

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে অন্যতম রেস্টুরেন্ট। আপনার যদি ভালো বাজেট থাকে, তবে আপনি ফুড বিজনেস আইডিয়া কাজে লাগাতে পারেন। তবে এর জন্য যে আপনার অনেক বড় বাজেট লাগবে, বিষয়টা এমনও নয়। হাতে থাকা অল্প বাজেট নিয়েই শুরু করে দিতে পারেন সবচেয়ে লাভজনক এ ব্যবসা।

প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি অল্প পুঁজিতে শুরু করার জন্যে কিছু ফুড বিজনেস আইডিয়া কাজে অনুসরণ করতে পারেন। যে কোনও ব্যবসা শুরুর প্রথমেই দরকার পরে ব্রেন স্টোর্মিং আইডিয়া, তারপর যথাযথ পরিকল্পনা এবং সবশেষে সফল বাস্তবায়ন। আজ কোর্সটিকায় আমরা সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে ১০ টি ফুড বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো।

আপনার পুঁজি অল্প হোক আর বেশি হোক, এ আর্টিকেলে বর্ণিত আইডিয়াগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে যে কোন ব্যবসাতেই লাভ করা সম্ভব। এমনকি, ছোট আকারে শুরু করেও ধীরে ধীরে যে কোনও ব্যবসাকে বড় করা যায়। আর খাদ্য কিংবা খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা বড় করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

অল্প বাজেটে ১০ টি ফুড বিজনেস আইডিয়া

বর্তমান বিশ্বে যে ৫ টি ব্যবসা কখনো ফ্লপ খায় না, তার প্রথমেই রয়েছে ফুড বা খাদ্য। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। আর এই জৈবিক চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার বিজনেস প্ল্যান সাজাতে পারেন।

আপনি যদি ব্যবসায় ক্ষতি করতে না চান, ব্যবসা শুরু করে কিছু দিনের মাঝেই পুঁজি হারাতে না চান, তবে ফুড বিজনেস আইডিয়া বেছে নেয়াই আপনার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চলুন, বর্তমানে সর্বাধিক প্রচলিত ১০ টি ফুড বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে জানি, যা আপনাকে আরো সফলতা এনে দিতে পারে।

১. ফাস্টফুড শপ

তরুণ প্রজন্মের কাছে ফাস্টফুড খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই ফাস্টফুড ব্যবসা খুলছেন এবং সফলও হচ্ছেন। যদিও আমাদের চারপাশে ইতোমধ্যেই অনেক ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। তাই বলে ভয়ের কিছু নেই।

যদি ভাল কোনও লোকেশনে ফাস্টফুডের দোকান দিতে পারেন, তবে অবশ্যই ভাল ব্যবসা করতে পারবেন।
ফাস্টফুড অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা হওয়ায় বর্তমানে অনেক উদ্যেক্তাগণ এর পেছনে বিনিয়োগ করছেন। টিনেজাররা ফাস্টফুডের মূল গ্রাহক হলেও সব ধরণের মানুষই কম বেশি এ ধরণের খাবার খেয়ে থাকেন।

২. রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

ফুড ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেকেই রেস্টুরেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ রেস্টুরেন্ট এমন একটি জায়গা, যেখানে সব সময়ই ক্রেতার সমাগম হয়ে থাকে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

রেস্টুরেন্টে খাবর বিক্রির বিশাল একটি অংশ লাভ হিসেবে থেকে যায়। অনেকেই বলে থাকেন, একটি রেস্টুরেন্ট থেকে মোট বিক্রির ৫০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট লাভ থাকে।

তবে এ ব্যবসার জন্যে আপনার দরকার একটি উপযুক্ত লোকেশন যেখানে লোক সমাগম বেশি। সাধরণত নগর বা শহরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। দোকান পরিচালনা করতে অবশ্যই একজন ভাল মানের বাবুর্চি নিতে ভুলবেন না। কারণ আপনার দোকানের খাবারের মান ভালো হলে ক্রেতাগণ বারবার ছুটে আসবেন।

পাশাপাশি নিত্য নতুন খাবারের আইটেম আপনার ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারলে এটি আপনার জন্য লাভজনক একটি প্রজেক্ট হিসেবে গণ্য হবে। তবে হ্যাঁ, খাবারের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।

৩. বেকারি ব্যবসা

বেকারি ব্যবসার একটি ভালো দিক হচ্ছে এর জন্য আপনাকে বাধ্যতামূলভাবে হাই লোকেশন ভাড়া নিতে হবে না। বাজেট কম হলে শুরুতে লোকাল এরিয়ার জন্যেই আপনি বেকারি প্রস্তুত করতে পারেন। পরবর্তীতে সুবিধা মতো বাইরের এলাকায় সাপ্লাই দিতে পারেন। আর এভাবে ধীরে ধীরে আপনার আশে-পাশের সমস্ত এলাকাই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন।

কম পুজিতে অনেক ব্যবসায়ির কাছেই বেকারি স্মার্ট একটি পছন্দ। কারণ, বেকারি প্রথমাবস্থায় ছোট থাকলেও সামার্থ বাড়ার সাথে সাথে এটি বড় করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে বেকারি পরিচালনার জন্যে বিশেষ কিছু যোগ্যতা লাগবে। যেমন, ব্রেড বা বিস্কুট তৈরির নতুন নতুন রেসিপি জানতে হবে।

কারণ একই ফ্লেভারের খাবার বেশিদিন জনপ্রিয় থাকে না। ভোক্তাগণ সব সময়ই নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিতে পছন্দ করেন। তাই এজন্য দক্ষ কোন কারিগরকে নিযুক্ত করতে পারেন। যদি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় সব ব্রেড ও বিস্কুট বানাতে পারেন, তবে বেকারি ব্যবসায় আপনি অবশ্যই সফল হবেন।

[penci_blockquote style=”style-3″ align=”none” author=””]টিপস: বেকারি সেট-আপকে ঝামেলা মনে হলে শুধু বেকারি শপ দিতে পারেন। যেখানে আপনি অন্য বেকারির আইটেমগুলাে পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করবেন।[/penci_blockquote]

৪. সুইট শপ

বিভিন্ন উৎসব ছাড়াও কোন আনন্দ উপলক্ষে মানুষ মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। আর মিষ্টি যাদের পছন্দের খাবার, তাদের কাছে এটি খেতে বিশেষ কোন উপলক্ষের প্রয়োজন হয় না। মিষ্টি এমন একটি খাদ্য যা প্রায় সবসময়ই দরকার হয়। তাই ফুড বিজনেসের জন্য সুইট শপ হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দ।

মিষ্টির দোকান দিয়ে লস করেছেন এমন ব্যবসায়ী আপনি খুঁজে পাবেন না। তবে হ্যাঁ, এ জন্য অবশ্যই আপনাকে এ ব্যবসার নিয়মগুলাে জানতে হবে। যদি সুস্বাধু আর ব্যতিক্রমী মিষ্টি বানানোর মতো ভাল কোনও কারিগর পান, তবে আপনি নিশ্চিন্তে মিষ্টির দোকান দিতে পারেন।

ভালো বাজেট না থাকলে বা দক্ষ কাউকে না পেলে নিজেই নেট ঘেঁটে দেশী এবং বিদেশী মিষ্টি বানানোর রেসিপি নিয়ে শুরু করে দিতে পারেন। ইন্টারনেটে মিষ্টি তৈরির অনেক জনপ্রিয় রেসিপি রয়েছে, যা আপনি খুব সহজেই শিখে নিতে পারবেন।

৫. চকলেট ব্যবসা

বাচ্চারা বরাবরই চকলেটের জন্য পাগল হয়। কিন্তু বড়রাও যে চকলেট খায় না, তা কিন্তু নয়। ছোট এবং বড় উভয় প্রজন্মকে টার্গেট করেই চকলেট তৈরি করতে পারেন। ছোট একটি চকলেট তৈরির ফ্যাক্টরি চালু করতে পারেন, কিংবা নিজের বাসাতেই শুরু করতে পারেন এ ব্যবসা। বাসায় ছোট পরিসরে চকলেট ব্যবসা শুরু করলে অনলাইনের মাধ্যমেও প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন।

অনলাইনে চকলেট তৈরির প্রচুর রেসিপি পাবেন। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানীর চকলেট তৈরির ফর্মূলাও এখন ইন্টারনেটে সহজলভ্য। আর যদি নিজে চকলেট বানাতে না চান, তবে বিভিন্ন দেশের চকলেট ইমপোর্ট করে হোল সেল সাপ্লাই দিতে পারেন।

৬. ক্যাটারিং ব্যবসা

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সাপ্লাই দেয়াকে ক্যাটারিং বলা হয়। আমাদের আত্মীয়-স্বজন, আত্মীয়দের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত সার্কেলে প্রায়ই কোন না কোন অনুষ্ঠান হয়। এসব অনুষ্ঠান বা পার্টিতে ফুড সাপ্লাই দিতে পারেন যেটাকে ক্যাটারিং বলা হয়।

তবে ক্যাটারিং শুধু পারিবারিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই হয় না। বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বছরজুরে অনেক অনুষ্ঠান থাকে। ক্যাটারিংএর জন্য এসব উৎসবকে টার্গেট করতে পারেন। বর্তমানে এই ধরনের ব্যবসার জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

সাপ্লাই দেয়া খাবার আপনি নিজেও তৈরি করতে পারেন। আবার চাইলে দক্ষ কোন রাধুনিও রাখতে পারেন। তবে যেভাবেই করুন না কেন, ভাল পরিকল্পণা এবং মানুষ হ্যান্ডেল করার মতো কোয়ালিটি থাকতে হবে। প্রথমাবস্থায় ক্যাটারিং বিজনেসকে অনেক কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি অনেক সহজ ও মজার ব্যবসা হয়ে উঠবে।

৭. জুস বা কফি শপ

হাই প্রফিটেবল কিছু ফুড বিজনেসের মধ্যে জুস বা কফি শপ অন্যতম। আপনি যদি কোন জনবহুল এলাকায় এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারে, তবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। শপিং মলের ভেতর জুস শপ দিতে পারেন। আবার চাইলে আপনি আইসক্রিম ও জুস শপ একত্রিত করেও ব্যবসা করতে পারেন।

অপরদিকে কফি শপ খুবই সাধারণ একটি ব্যবসা আইডিয়া হলেও আপনি এটিকে অসাধারণ করে তুলতে পারেন। বিভিন্ন টাইপের কপি, চা এবং সেই সাথে স্ন্যাকস্ নিয়ে চালু করতে পারেন একটি অন্যরকম একটি কপি শপ।

৮. আইসক্রিম শপ

গরমে আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় এবং স্বস্তিদায়ক খাবার। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে আইসক্রিমের চাহিদা বেশি দেখা যায়। যদিও সব ঋতুতেই কম-বেশি আইসক্রিম খাওয়া হয়, কিন্তু গরমকালে আইসক্রিমের চাহিদা আরও বেশি থাকে। সাধারণত স্কুল-কলেজের সামনে আইসক্রিম বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়।

ঠান্ডার সময় একটু ঢিলেঢালা হলেও গরম এবং স্বাভাবিক আবহাওয়ায় আইসক্রিমের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়। তাই দারুণ সম্ভাবনাময় এই ব্যবসাটির কথা আপনি ভেবে দেখতে পারেন। তবে এর জন্যে ভালো কোন লোকেশন লাগবে। আইচক্রিমের জন্য শপিং মলের কিংবা স্কুুল-কলেজের সামনে জায়গাই সবথেকে উত্তম।

এছাড়াও পার্ক, খেলার মাঠ ও আবাসিক এলাকাতেও আইসক্রিমের ব্যপক চাহিদা থাকে। আজকাল অতিথি আপ্যায়নেও আইসক্রিমের ব্যবহার দেখা যায়। তাই বলা যায় আইসক্রিম ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করতে পারেন।

[penci_blockquote style=”style-3″ align=”none” author=””]প্রশিক্ষণ: ভালো মানের আইসক্রিম তৈরি শেখার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে আইসক্রিম তৈরি শিখে নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।[/penci_blockquote]

৯. অর্গানিক সবজির ব্যবসা

বর্তমানে ভেজালযুক্ত সবজির ভিড়ে মানুষ ভেজালমুক্ত অর্গানিক সবজির খোঁজ করে। এটি খুবই সাধারণ কোন বিজনেস আইডিয়া মনে হলেও এর চাহিদা আকাশমুখী। কারণ ভেজালে ভরা এই বাজারে প্রত্যেকেই চায় কেমিক্যাল মুক্ত পণ্য পেতে। এখন সবাই কমবেশি স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে।

তাই অর্গানিক সবজির যোগান দিতে আপনি বাড়িতেই এর উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারেন। আর এটি এমন একটি ব্যবসা যা আপনি খুব সহজেই এবং কম টাকায় শুরু করতে পারবেন। আপনার ঘরে, ছাদে বা বাড়ির আশেপাশে সামান্য খোলা জায়গায় সবজি চাষ শুরু করে দিতে পারবেন।

বাণিজ্যিকভাবেই অর্গানিক সবজির ব্যবসা খুব কম পরিমাণ মূলধন দিয়ে শুরু করা যায়। তাই কম টাকায় সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা খুঁজে থাকলে আপনি শুরুটা করতে পারেন অর্গানিক সবজির মাধ্যমে।

১০. ফ্লোয়েটিং ফুড বিজনেস

ভাসমান ফুড ব্যবসা এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান বা পার্কের আশে-পাশে মোবাইল ফুড শপ দিতে পারেন। নদীর তীরে বা বিশাল জায়গাজুড়ে তৈরি হওয়া কোন দর্শণীয় স্থানে সাধারণত হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থাকে না। তাই এসব জায়গায় ঘুরতে আসা লোকদের খাবার চাহিদা ভাসমান দোকানের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।

ফ্লোয়েটিং ফুড বিজনেসের একটি ভালো দিক হচ্ছে, এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোন দোকান ভাড়া করতে হবে না। আপনার একটি অতি সাধরণ ফুড কার্ট থাকলে আপনি এ ধরনের ব্যাবসা খুব সহজেই শুরু করতে পারবেন। দর্শনার্থীদের জন্যে যদি খাবারের ব্যবস্থা করা যায়, তবে একদিকে তারা যেমন উপকৃত হবে, অন্যদিকে আপনারও ভাল ব্যবসা হবে।

শেষ কথা

বাজেট কম বলে ব্যবসা শুরু করতে আতঙ্কিত হবেন না। আপনার পিছিয়ে আসার কারণে হয়ত অনেকেই এগিয়ে যাবে এই প্রতিযোগিতার যুগে। পৃথিবীতে খাদ্যের চাহিদা কোনদিন ফুরোবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ খাবার খাবে। তাই অল্প বাজেটে এই ১০ টি ফুড বিজনেস আইডিয়া আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। সবসময় চলবে আপনি যদি এমন কোনও ব্যবসা চান, তবে এই ফুড বিজনেস আইডিয়া থেকে যে কোন একটি নিয়ে নেমে পড়ুন।

Related Post

Leave a Comment