স্কলারশিপ

আমাদের মধ্যে অনেকেরই স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার্জনের স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় না জানায় মেধা ও সৃজনশীলতা থাকা সত্যেও অনেকেই সফল হয় না। তাই স্কলারশিপ পেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা অতি জরুরি।

আমাদের দেশে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে থাকে। তবে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে কম ধারণা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারে না। ফলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার্জন স্বপ্নই থেকে যায়।

আজ কোর্সটিকায় আমরা জানবো স্কলারশিপের সকল তথ্য। আমাদের এ আলোচনায় থাকবে স্কলারশিপ কি, স্কলারশিপ কখন পাওয়া যায় এবং স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সহ আরো অনেক বিস্তারিত তথ্য। তাই আপনার স্বপ্ন পূরণে স্কলারশিপ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে নিন।

স্কলারশিপ কি?

স্কলারশিপ হল শিক্ষার্থীকে দেয়া এক ধরনের আর্থিক সহায়তা, যা তার একাডেমিক কৃতিত্ব বা অন্যান্য মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। স্কলারশিপকে বৃত্তি, ছাত্রবৃত্তি বা শিক্ষাবৃত্তি বলা যায়। মেধাবি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বিনা খরচে উচ্চ শিক্ষার (Higher Studies) সুযোগ করে দেয়। এটিই মূলত স্কলারশিপ। মূলত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অর্জনের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।

স্কলারশিপ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে পূর্ণবৃত্তি বা Full Scholarship, যেখানে একজন শিক্ষার্থীর সমস্ত টিউশন ফি বিনামূল্যে করা হয়। Full Scholarship এ বই কেনার খরচও কখনো কখনো প্রতিষ্ঠান বহন করে এবং মাসিক উপবৃত্তি প্রদান করে।

আরো পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে কিভাবে আবেদন করবেন?

অপরটি হচ্ছে আংশিক বৃত্তি বা Partial Scholarship, এখানে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক টিউশন ফি বাতিল করা হয় না। এ ধরনের বৃ্ত্তিতে Full Scholarship এর তুলনায় তুলনামূলক কম অর্থ প্রদান করা হয়।

স্কলারশিপের মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। এটি হতে পারে আপনার পড়ালেখার সম্পূর্ণ খরচ অথবা এককালীন কয়েকশত ডলার পুরষ্কার। তবে যেভাবেই হোক না কেন, স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার বিশেষ কারণ হলো, এটি আপনার শিক্ষার ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

স্কলারশিপের ধরণ

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্থা ও নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ পেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। তাই আপনকে স্কলারশিপ পাওয়া আগে নির্ধারিত শর্ত ও যোগ্যতার মান পূরণ করেই অংশগ্রহণ করতে হবে।

এসব শর্ত ও যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে একাডেমিক অর্জন, বিশেষ কোনো প্রতিভা, বৈশিষ্ট্য বা আগ্রহের সংমিশ্রণ। তবে কিছু স্কলারশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করেও বৃত্তি প্রদান করে থাকে। কিছু প্রতিষ্ঠান এমনও আছে, যারা নির্দিষ্ট একটি শ্রেণিকে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। যেমন শুধুমাত্র মহিলা বা স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্যে বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে স্কলারশিপদানকারী প্রতিষ্ঠানে আপনি অথবা আপনার মা-বাবা কাজ করলেও স্কলারশিপ পাওয়া যায়। পাশাপাশি কিছু স্কলারশিপ Family Background এর ওপর ভিত্তি করেও দেওয়া হয়। যেমন সামরিক পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে।

স্কলারশিপ কখন পাওয়া যায়?

স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় জানার পূর্বে জানতে হবে স্কলারশিপ কখন পাওয়া যায়। এইচএসসি বা অনার্স শেষে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়া যায়। উভয় স্তরের মধ্যে পার্থক্য এই যে, এইচএসসি শেষে স্কলারশিপের আবেদনে প্রক্রিয়া অনার্সের থেকে তুলনামূলক সহজ। তবে আপনি এইচএসসি বা অনার্স যে স্তরেই স্কলারশিপই চান না কেন, এটি পেতে হলে প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা ও শর্ত পালন করতে হবে।

যেহেতু প্রতিটি স্কলারশিপ একটি নির্ধারিত সময়সীমার ওপর নির্ভর করে তাই শিক্ষার্থীর এ সময়ের মধ্যেই আবেদন করতে হয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে শুরু থেকে পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে আবেদন করে থাকে। তাই এই মুহূর্তে আপনি কোন শ্রেণিতে আছেন এবং স্কলারশিপের যাবতীয় বিষয় গবেষণা করে আবেদন করা উচিত।

বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থ্যা শিক্ষার্থীদের কিছু নিয়ম বা শর্ত বেঁধে দেয়। যেমন ক্রীড়া ও প্রতিভাভিত্তিক বৃত্তি পেতে হলে আপনাকে আপনার পারফরম্যান্সের ওপর একটি পোর্টফোলিও বা ক্রীড়াবিষয়ক ডকুমেন্টারি সাবমিট করতে হতে পারে৷ তবে বিষয়ভিত্তিক স্কলারশিপের জন্য এগুলোর প্রয়োজন হয় না।

স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কি?

এইচএসসি শেষে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে এইচএসসিতে থাকা অবস্থায়ই নিজের একাডেমিক অর্জন সুদৃঢ় করতে হয়। এই স্তরে ভালো ফলাফল করলে স্কলারশিপ পাওয়ার পথ অনেকটা মসৃণ হয়। প্রতিটি স্কলারশিপের একটি নিজস্ব আবেদন প্রক্রিয়া থাকে। আপনি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।

স্কলারশিপ প্রদানকারী কিছু স্থানীয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান আবেদনপত্র পূরণ করতে বলবে। তবে বেশিরভাগ আবেদনপত্র অনলাইনেই সাবমিট করতে হয়। সাধারণ একাডেমিক-ভিত্তিক স্কলারশিপের জন্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে, তার ওর একটি আর্টিকেল সাবমিট করতে হয়।

সুতরাং আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে, আবেদন পত্রটি হাতে পাওয়ার পরে এটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এরপরে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদনটি পূরণ করুন এবং নিশ্চিত করুন যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আপনার আবেনটি স্কলারশিপ দাতার কাছে পৌঁছাবে।

স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই করা হয়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির জন্য Scholastic Assessment Test এর স্কোর চাওয়া হয়। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে SAT স্কোর বৃদ্ধিতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

এছাড়াও আপনি যদি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক, স্বেচ্ছাসেবামূলক, সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন, তা স্কলারশিপ পেতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং বিভিন্ন অলিম্পিয়াড, ভলান্টিয়ারিং বা সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই কাজগুলো আপনার সার্টিফিকেটে অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করবে।

স্কলারশিপের আবেদনের জন্য সুপারিশপত্র (Recommendation Letter) অতি জরুরি একটি বিষয়। সুপারিশপত্রে আপনার ইন্টারেস্ট, সামাজিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বদানের ক্ষমতা সম্পর্কে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি এই সুপারিশপত্র এমন কাউকে দিয়ে লেখাতে হবে, যিনি আপনাকে ভালো জানেন।

স্কলারশিপ চাচ্ছেন, কিন্তু ইংরেজী জানেন না, তা কি হয়? অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি আপনাকে ইংরেজীতে কথা বলা, শোনা এবং বোঝার দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে IELTS এবং TOEFL স্কোর আপনার ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণ করবে। আপনি এখন স্মার্টফোনে Android App এর মাধ্যমেই ঘরে বসে IELTS প্রাকটিস করতে পারেন।

স্কলারশিপের অর্থ কিভাবে পাবেন?

আপনি কিভাবে প্রদেয় অর্থ গ্রহণ করবেন তা সরাসরি স্কলারশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সরাসরি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠিয়ে দেয় এবং কর্তৃপক্ষ সেখান থেকেই আপনার যাবতীয় খরচ সমন্বয় করে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান চেকের মাধ্যমে সরাসরি আপনার কাছে অর্থটি প্রেরণ করতে পারে।

শেষ কথা

স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় তো জানলেন, এবার আপনার কাজ হচ্ছে এটি পাওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলা। মনে রাখুন স্কলারশিপ পেতে হলে প্রয়োজন যোগ্যতা ও প্রতিভা। কারণ যেকোন প্রতিষ্ঠান একজন ভালো শিক্ষার্থীকেই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে, যেন সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারে।

তার নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে তুলুন। যখন একজন ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি স্কলারশিপ পাবেন, স্বাভাবিকভাবেই অন্যরাও আপনাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। তারাও চাইবে স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে। তাই নিজেকে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করুন এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করুন।

Related Post

Leave a Comment