ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি স্বাধীন পেশা যেখানে নিজের ইচ্ছামতো যখন খুশি তখন কাজ করা যায়। এখানে কাজের অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে, তত বাজেটের কাজ করা যাবে। ফলে ইনকামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। আর এই কারণেই প্রচুর মানুষ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসতে চায়।

কিন্তু সঠিক গাইডলাইনের অভাবে আসতে পারে না এবং বেশিদূর যেতেও পারে না। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আলোচনা করবো কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো এবং কি কি বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় ইত্যাদি। তো চলুন শুরু করা যাক।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো?

ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে নিস বা বিষয় বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রথমেই আপনি সিদ্ধান্ত নিন কোন বিষয়ে ফ্রিলান্সিং করতে চান? অর্থাৎ কোন বিষয়ে অভিজ্ঞা হয়ে ইন্টারন্যাশনালি বায়ারদের সাথে কাজ করতে চান। তাই এ জন্য বিষয় বাছাই করাটা অধিক জরুরী। যদি সঠিক বিষয় বাছাই করা না হয় তাহলে আপনি বেশিদূর এগুতে পারবেন না।

যেমন ধরুন, আপনি এমন একটি বিষয় বাছাই করে নিলেন যেটা অনেক সহজ এবং তার সাথে কম্পিটিশন অনেক বেশি। অথবা কাজটি কঠিন এবং সাথে কম্পিটিশন অনেক বেশি। আবার দেখা গেলো এমন একটি বিষয় বাছাই করা হয়েছে যেটার প্রতি আপনার আগ্রহই নেই বা ভালো লাগে না।

তাই দেখা যাবে কিছু দিন বা মাস পরে আপনার ধৈর্য হারিয়ে গেছে। তখন ফ্রিলান্সিং সেক্টরে টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে আপনার। এই কারণে এমন একটি বিষয় বা নিস বাছাই করতে হবে যেটাতে আপনার আগ্রহ আছে এবং যেই কাজটিতে কম্পিটিশন অনেক কম।

তাহলে এখন একটি প্রশ্ন আসে কোন বিষয় বা নিস সব থেকে সহজ এবং কম্পিটিশন অনেক কম? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমেই আমাদের ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস রিসার্চ করতে হবে। বর্তমানে অনেকগুলো ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেমন ফাইভার, ফ্রিলান্সার ডট কম, আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি।

এই সকল ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসে দেশ বিদেশের বায়াররা আসে এবং তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করিয়ে নেয় দেশ বিদেশি সকল অভিজ্ঞ ফ্রিলান্সারদের দ্বারা। আমাদের আগে সেই সকল মার্কেটপ্লেসে যেতে হবে। তারপর সবগুলো ক্যাটাগরি এক এক করে দেখতে হবে। যেমন উদাহরণসরূপ আমরা ফাইভার নামক একটি মার্কেটপ্লেস রিসার্চ করা দেখবো।

প্রথমেই আমরা ফাইভার মার্কেটপ্লেসে যাবো এবং নিচে একটু স্ক্রল করলেই অনেকগুলো ক্যাটাগরি দেখতে পাবো যেগুলো এই মার্কেটপ্লেসে খুব জনপ্রিয়। সঠিক এবং কম্পিটিশন রিসার্চ করার জন্য প্রত্যেকটি ক্যাটাগরি ভালোভাবে গবেষণা করতে হবে।

ক্যাটাগরিগুলোতে যেই বিষয়গুলো দেখতে হবে সেগুলো হচ্ছে অর্ডার কেমন, কতগুলো অর্ডার বর্তমানে আছে, বাজেট কত ইত্যাদি। সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই বিষয়ে আপনার আগ্রহ কেমন? কারণ দেখা গেলো আপনি বেশি পরিমাণের বাজেট দেখেই নিশটা বাছাই করলেন কিন্তু পরে তো আর এগুতে পারবেন না।

কি কি বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং একটি উন্মুক্ত কর্মক্ষেত্র। এখানে আপনি আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে যেকোন কাজই করতে পারেন। এখন চলুন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসের কিছু জনপ্রিয় কাজ সম্পর্কে ধারণা নেই যেগুলো চাহিদা অনেক বেশি এবং সবসময় থাকবে।

১. গ্রাফিক ডিজাইন

ফ্রিল্যান্সিংয়ে গ্রাফিক ডিজাইন অনেক বড় একটি নিশ। এর মধ্যে আছে Logo & Brand Identity, Web & App Design, Visual Design, Print Design, Social Media Design, Art & Illustration ইত্যাদিসহ অনেক সাব ক্যাটাগরি। তবে এটাকে আমরা দুইভাবে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ ডিজাইন এবং অন্যটি হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইন।

আপনি একটি ক্যাটাগরি নিয়েও কাজ করতে পারেন অথবা এগুলো থেকে যেকোনো একটি সাব ক্যাটাগরি নিয়েও কাজ করতে পারেন। ডিজাইন ক্যাটাগরিতে যেই দুইটি সফটওয়্যার বেশি ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর। আপনি এগুলোর ব্যবহার শিখে নিতে পারলে এই ক্যাটাগরিটি আপনার কাছে অনেক সহজ মনে হবে।

২. ডিজিটাল মার্কেটিং

গ্রাফিক ডিজাইনের মতোই আরো একটি জনপ্রিয় ক্যাটাগরি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিংও অনেক বড় একটি ক্যাটাগরি। এর মধ্যেও অনেক সাব ক্যাটাগরি রয়েছে। যার মধ্যে জনপ্রিয় কিছু সাব ক্যাটাগরি হচ্ছে সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইত্যাদি।

বর্তমান যুগ যেহেতু ইন্টারনেটের যুগ, তাই বেশিরভাগ বিজনেস এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে উঠেছে। আর তাই সেই বিজনেসগুলোকে প্রচার প্রচারণার জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, টুইটার, গুগল অ্যাডস ইত্যাদি।

প্রচারণার এই বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রত্যেক কোম্পানি ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার করে থাকে। তাই প্রচুর চাহিদাসম্পন্ন এই পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করতে হলে আপনাকে উপরে উল্লেখিত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের শাখাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। অথবা চাইলে এগুলো থেকে যেকোনো একটি দিয়েই আপনি ফ্রিলান্সিং সেক্টর ক্যারিয়ার শুরু করে দিতে পারবেন।

৩. কন্টেন্ট রাইটিং বা লেখালেখি

লেখালেখির চাহিদা অনেক আগে থেকেই রয়েছে। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন জায়গায় লেখালেখি করতো। আর যেহেতু এখন ইন্টারনেটের বিপ্লব ঘটেছে তাই মানুষ এখন অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন ওয়েবসাইট এবং সোশাল মিডিয়ায় লেখালেখি করে।

যারা এই লেখালেখি করার কাজ করে তাদেরকে কন্টেন্ট রাইটার বলা হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন বর্তমানে এই লেখালেখি করেও ফ্রিলান্সিং করা যায়। লেখার মান যদি ভালো হয় তাহলে এই লেখালেখিকেই আপনি নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন।

আপনি যদি ফাইভার মার্কেটপ্লেসের Writing & Translation মেন্যুতে যান তাহলে দেখতে পাবেন এই ক্যাটাগরিতে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। তাই আপনার যদি লেখালেখি ভালো লাগে তাহলে কন্টেন্ট রাইটিং বা লেখালেখিকেই ফ্রিলান্সিং নিস হিসেবে নিতে পারেন।

৪. ভিডিও এবং অ্যানিমেশন

বর্তমানে ভিডিও এবং অ্যানিমেশন সেক্টরটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে অন্য ক্যাটাগরির মতো এটাও অনেক বড় একটি নিশ বা বিষয়। যেমন ভিডিও এডিটিং একটি নিশ, অ্যানিমেশন ভিডিও, মোশন গ্রাফিক্স, কার্টুন ভিডিও এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি আলাদা নিশ বা টপিক।

এগুলোর কিছু জনপ্রিয় সাব ক্যাটাগরি হচ্ছে Logo Animation, Character Animation, Short Video Ads, 3D Product Animation, Intros & Outros, Slideshow Videos ইত্যাদি। এগুলো থেকে আপনি যেকোনো একটি বা একের অধিক নিয়েও কাজ করতে পারেন।

৫. প্রোগ্রামিং এবং টেকনোলজি

গ্রাফিক ডিজাইনের মতো প্রোগ্রামিং ক্যাটাগরিটাও অনেক বড় একটি নিশ। এর মধ্যে অনেকগুলো সাবক্যাটাগরি রয়েছে। যেমন, WordPress, Game Development, E-Commerce Development, Mobile এন্ড Desktop Application, Cybersecurity & Data Protection ইত্যাদি। এগুলো অনেক জনপ্রিয় এবং মার্কেটপ্লেসে চাহিদাবহুল।

একেকটি প্রজেক্টে ৫০০ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে এটা নির্ভর করে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর। যেহেতু এখানে প্রোগ্রামিং বা কোডিং বিষয়টা আছে তাই অনেকে ভয়ে এই সেক্টরে কাজ করতে চায় না। কিন্তু একবার যদি ভয় কাটিয়ে শেখা যায় তাহলে প্রোগ্রামিংকেই নিজের ক্যারিয়ার নেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এটাতে আগ্রহ থাকা লাগবে।

এগুলো ছাড়াও ফ্রিলান্সিং করার জন্য আরো অনেক কাজ আছে। যেমন, ডেটা এন্ট্রি, ইমেজ এডিটিং, ট্রান্সলেসন বা ভাষা পরিবর্তন, ইউটিউব ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি। আপনি যদি ফ্রিলান্সিং নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আমার ওয়েবসাইট স্কিলগড়ি ভিজিট করতে পারেন।

এখানে ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক সকল ধরনের রিসোর্স প্রকাশ করা হয়। যাই হোক, আজকে এতোটুকুই। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে ফ্রিলান্সিং নিয়ে তাহলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই শেয়ার করবেন, আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।

Related Post

Leave a Comment