ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই কাজ করেন না কেন, বায়ারকে ইমপ্রেস করা বা বশে আনা সত্যিই খুব কঠিন একটি কাজ। তাই নয় কি? আপনি খুব ভালো কাজ জানেন, কিন্তু বায়ার ঠিক কি চাচ্ছে সেটি বুঝতে পারছেন না। তাহলে আপনার ভালো কাজ জানার কোন মূল্যই থাকবে না। আর এ জন্যই বায়ারের মন বুঝতে হবে। যেটিকে আমরা সাধারণ ভাষায় Mind Reading বলে থাকি।

আজ কোর্সটিকায় আমরা দেখবো কীভাবে আপনি আপনার ক্লায়েন্টের মাইন্ড রিড করে তাকে ইমপ্রেস করবেন। এর ফলে যেকোন মার্কেটপ্লেসেই আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কাজ করে বায়ারকেও সন্তুষ্ট করতে পারবেন।

ও হ্যাঁ; এর আগে আমরা আরেকটি আর্টিকেলে ফাইভারে নিশ্চিত কাজ পাওয়ার টুকিটাকি সব বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ফাইভারে কাজ পাচ্ছেন না? এগুলো ফলো করলে ঠিকই কাজ পাবেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন একবার। আর দেরী না করে চলুন আজকের টপিকটি শুরু করি।

আপনি যেকোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন অথবা বাইরে পারসোনাল ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করেন, দুই ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্টকে ইমপ্রেস করা খুব বেশি প্রয়োজন। আপনি যদি তার সাথে নিয়মিত কাজ করতে চান বা তাকে আপনার রেগুলার ক্লায়েন্ট বানাতে চান তাহলে তাকে খুশি করার বিকল্প কিছুই নেই। আর এই ইমপ্রেস করার কাজটিই আপনাকে করতে হবে যখন আপনাদের প্রথম চ্যাটিং বা আলাপ হবে।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে; “First impression is the last impression”। বিষয়টি অনেকটা এমনই। আপনি যদি প্রথম সাক্ষাতে আপনার ক্লায়েন্টের মন জয় করতে পারেন, তাহলে ক্লায়েন্টের মনে তার রেশ থাকবে দীর্ঘসময়। তাই প্রথম সাক্ষাতে আপনি নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন, তার ওপরেই নির্ভর করছে আপনার কাজ পাওয়া না পাওয়া।

ক্লায়েন্টকে কিভাবে ইমপ্রেস করবেন?

আপনার ক্লায়েন্ট যখন আপনাকে প্রথম ম্যাসেজ দেবে তখন শুরুতেই সে কী চাচ্ছে তার ছোট একটি ব্রিফিং সে লিখে দেয়। আর এরপর থেকেই আপনার কাজ শুরু। তো এখন আপনার কাজ কি? বা কিভাবে ইমপ্রেস করা শুরু করবেন আপনার বায়ারকে? আপনাকে যেটি করতে হবে সেটি হল “প্রশ্ন”! আপনাকে প্রচুর প্রশ্ন করতে হবে এবং সেটি হতে হবে অবশ্যই কাজ সম্পর্কিত। চলুন কি ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, তা এক নজরে জেনে নেই।

১। আপনার বায়ার যদি কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না বলে তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার ঠিক কি প্রয়োজন বা তার সমস্যা কি? আপনি তাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন।

২। তিনি যে কাজটি আপনাকে দিয়ে করাবেন তার উদ্দেশ্য কি? কাজটি তার বিজনেসের ঠিক কোন প্রয়োজনে তিনি ব্যবহার করবেন? তার বিজনেসের ক্যাটাগরি সম্পর্কে জানুন।

৩। ক্লায়েন্টের বিজনেস, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে ভালো করে জানুন। তার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেটা একটু ঘুরে আসুন। অবশ্যই ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজ ভালো করে দেখবেন। এর ফলে তার বিজনেস সম্পর্কে ভালো পরিস্কার একটি ধারণা আপনি পাবেন।

৪। আপনার বায়ার আগে কখনো ঐ কাজটি করিয়েছেন কিনা? বা যদি একই কাজ আগেও করা থাকে তাহলে তিনি কেন নতুনভাবে আবার কাজটি করাতে চাচ্ছেন? আগের কাজের সমস্যাই বা কি ছিল এ সম্পর্কে জানুন।

৫। তিনি যে নতুনভাবে কাজটি করাবেন সে সম্পর্কে তার ভাল লাগে বা অপছন্দের কিছু আছে কিনা? বা তিনি ঠিক কি রকমের কাজ চাচ্ছেন তা জানার চেষ্টা করুন।

৬। তার বিজনেসের যদি কোন কম্পিটিটর বা প্রতিযোগি থাকে, তাহলে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। প্রয়োজনবোধে তাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক চাইতে পারেন।

এত প্রশ্ন করে লাভ কি?

নিশ্চই আপনার কাছে এ প্রশ্নের তালিকাটি দীর্ঘ মনে হচ্ছে? কিন্তু একটা কথা মনে রাখুন, যত প্রশ্ন, তত বেশি ধারণা। আপনি যত বেশি প্রশ্ন করবেন, ক্লায়েন্টের কাজ সম্পর্কে আপনি তত বেশি অবগত হবেন। আপনি যখন ক্লায়েন্টকে তার কাজ সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করবেন এবং তিনি উত্তর দেবেন, তখন তার সেই উত্তরগুলো দিয়েই কিন্তু আপনি আপনার ক্লায়েন্টের মাইন্ড রিড করতে পারবেন।

তার উত্তরগুলো থেকেই আপনি বোাঝার চেষ্টা করবেন তার ভাল লাগা বা মন্দ লাগাগুলো কি কি। তিনি কেন তার আগের করানো কাজটি বাদ দিয়ে নতুনভাবে করাতে চাচ্ছেন। আগের কাজের সমস্যাগুলো জেনে গেলে আপনি একই ভুলগুলো নিজের কাজের ক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতে পারবেন।

তার বিজনেস সম্পর্কে জানার পরে তার ওয়েবসাইট দেখে আপনি আইডিয়া পাবেন তার বিজনেস কি ধরনের এবং সেটা আপনাকে আপনার কাজ করার সময় রিসার্চ করতে সাহায্য করবে। আপনি বুঝতে পারবেন তার বিজনেস ক্যাটাগরি অনুযায়ী এখন কোন ট্রেন্ড চলছে বা কোন টাইপ কাজ আপনার করতে হবে। পাশাপাশি আপনি ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছেন তার নতুন কাজে সে কোন কোন বিষয়গুলো চাচ্ছেন যা আগের কাজে পূরণ হয়নি।

বাড়তি বোনাস হিসেবে আপনি যদি ক্লায়েন্টের কম্পিটিটর বা প্রতিযোগিদের সম্পর্কে জেনে যান তাহলে তো আরও ভাল। কারণ, তিনি অবশ্যই চাইবেন তার কাজটি যেন তার কম্পিটিটরদের থেকে বেস্ট হয়। যা তার বেশি সেল জেনারেট করতে সাহায্য করবে।

এর ফলাফল কি?

আপনি যখন ক্লায়েন্টের সাথে এত কথা বলতেছেন ঠিক একই সময়ে ক্লায়েন্টও আপনার সম্পর্কে একটা পজিটিভ ধারণা তৈরি করছেন। তিনি বুঝতে পারবেন আপনি যেই কাজই করেন না কেন সেটায় আপনি অনেক পারদর্শী। আপনি আপনার কাজের প্রতি অনেক আন্তরিক এবং ক্লায়েন্টের প্রতিও আপনার আন্তরিকতা রয়েছে। আপনি তাকে হয়ত এমন প্রশ্ন করেছেন যার সম্পর্কে তিনি আগে ভাবেননি।

আপনার জিজ্ঞাসার ফলে তার সেই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হতে পারে। আর এটি তার বিজনেসের জন্য ভালও হতে পারে। পরবর্তীতে তিনি নিজে থেকেই আপনাকে অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করে হেল্প নিতে পারেন। আর আপনি যখন এত কথা বলে ক্লায়েন্টের সাথে আপনার রসায়ন তৈরি করে ফেলবেন তখন সে আর অন্য কাউকে নক দিবে না।

কারন অন্য কেউ হয়ত তাকে এত কিছু জিজ্ঞেস করেনি বা এত কিছু জানতেও চায়নি। ক্লায়েন্ট তখন আপনার উপর এমনিতেই ইমপ্রেস হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে আপনাকে দিয়েই হয়ত রেগুলার কাজ করাবে।

ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে?

ক্লায়েন্টকে বন্ধুর মত মনে করুন। স্যার স্যার কিংবা ম্যাডাম ম্যাডাম বলে মুখে ফেনা বের করার দরকার নেই। শুরুতেই তার নাম জিজ্ঞেস করে নিন এবং অবশ্যই আগে নিজের নাম বলে নিবেন। আর সব কথা যেহেতু ইংরেজীতেই হবে, সুতরাং ইংরেজীতে তো আপনাকে একটু ভালো হতেই হবে।

যখন কাজ পেয়ে যাবেন, তখন ডলার আয়ের পাশাপাশি নিজের স্কিলও ডেভেলপ করুন। বিফলে যাবে না কিছুই। নিজের পোর্টফলিও তৈরি করুন। আগে হোক আর পরে হোক, কষ্ট করলে সফলতা আসবেই। কারো জলদি আসে, কারোটা দেরিতে।

উপরের কাজগুলো করলে আশা করা যায় খুব দ্রুত কিছু গিগ বিক্রির অর্ডার পেয়ে যাবেন। গিগ অনুযায়ী কাজ করে এবং সময়মত কাজ ডেলিভারি দিয়ে বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন। যত বেশি ভালো ফিডব্যাক পাবেন, আপনার গিগ তত বেশি সার্চের উপরে উঠতে থাকবে।

Related Post

Leave a Comment