প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

আমাদের ত্বকের অভ্যন্তরে সেবাসিয়াস নামের এক ধরনের গ্রন্থি রয়েছে। সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সিবাম নামে এক ধরনের পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই সিবাম এক ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ। সিবামযুক্ত ত্বক তথা তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য যা যা করতে হবে তা আপনাদের আজকে জানানো হবে।

এই সিবাম আমাদের ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বককে বাইরের ক্ষতি হতে রক্ষা করার জন্য সিবাম উৎপন্ন হয়। তাই মানুষ যখন রোদে যায়, রোদে থাকা অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে শুরু করে। তখন ত্বককে রক্ষা করার জন্য বেশী পরিমাণে সিবাম উৎপন্ন হতে শুরু করে। যার ফলে ত্বক তৈলাক্ত হতে শুরু করে।

রোদের মাঝে গেলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে সিবাম বেশী পরিমাণে উৎপন্ন হয়। ধুলোর কারণে লোমকূপে যখন ধুলো লেগে থাকে তখন সিবাম বের হতে না ভীতরে জমে থাকে। এই জমে থাকা সিবাম থেকেই তৈরি হয় ব্রণ। যেসব ব্যক্তি রোদের মাঝে থাকেন এবং রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন নেন না তাদের এই সমস্যাগুলো বেশী হয়ে থাকে।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

তৈলাক্ত ত্বক এর যত্ন নেওয়ার জন্য মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। মধু, লেবু, অ্যালোভেরা বা শসা প্যাক বানিয়ে বা সেই ফলের রস বের করে মুখের মধ্যে লাগিয়ে রাখুন। যতক্ষণ না শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করুন।

তৈলাক্ত ত্বক এর যত্ন নেওয়ার জন্য যা যা করতে হবে চলুন তা জেনে আসি।

১. মুখ পরিষ্কার রাখুন

আপনার ত্বক যদি ইতোমধ্যে তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে দিনে অন্তত দু’বার মুখ পরিষ্কার করতে হবে। যদি ধুলোবালি বেশী পড়ে থাকে তাহলে দু’বারের বেশীও পরিষ্কার করতে হবে।

মুখ পরিষ্কার করার সময় যেসব সাবানে বেশী ক্ষার রয়েছে সেসব সাবান এড়িয়ে চলুন। মৃদু ক্ষারীয় সাবানগুলো ব্যবহার করুন। গ্লিসারিন রয়েছে এমন সাবানগুলো মৃদু ক্ষারযুক্ত হয়ে থাকে।

২. মধু 

মধুর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এটি ত্বকের জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে। মুখ যদি তৈলাক্ত আকার ধারণ করে কিংবা ব্রণ হয়ে থাকে তাহলে এক চামচ মধু নিয়ে মুখের মধ্যে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।

মধু মাখানো শেষে যতক্ষণ পর্যন্ত মধু না শুকিয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মধু শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. লেবু ও বেকিং সোডা

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে লেবু খুবই ভালো কাজ করে। ত্বকের মধ্যেকার তেল শোষণে লেবু খুবই কার্যকর। এছাড়া লেবুর মধ্য রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যার কারণে ত্বকের মধ্যে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। বেকিং সোডা অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করে এবং মৃত কোষ দূর করে। যার ফলে ত্বক আস্তে আস্তে ভালো হতে শুরু করে।

একটি লেবুর রস ও অল্প বেকিং সোডা নিয়ে একটি বাটিতে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৪. দুধ ও হলুদ গুড়ো

দুধ একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান এবং হলুদ গুড়ো ত্বকের যত্নে অনেক পুরোনো একটি উপাদান। এই দুই উপাদান মিলিয়ে প্যাক তৈরি করলে তা ত্বক তৈলাক্ত থেকে রক্ষার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্যও বজায় থাকবে।

এক চামচ হলুদ গুড়োর সাথে অল্প পরিমাণ উষ্ণ দুধ নিয়ে একটি বাটিতে ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে। তারপর সেই প্যাক মুখে ও গলায় ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করার পরে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এভাবে দু’বার করে ব্যবহার করতে হবে।

৫. তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে শসা ব্যবহার করুন

ত্বকের যত্নে শসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। শসা ব্যবহারে ত্বক থাকে ঠাণ্ডা, ত্বক থাকে পরিষ্কার এবং লোমকূপ বন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করে। উক্ত উপাদানগুলোর কারণে ত্বকে নতুন করে তেল জমতে পারে না। এবং লোমকুপ পরিষ্কার হওয়ার পরে পুরোনো ময়লা বের হয়ে আসে।

একটি শসাকে কেটে যতগুলো প্রয়োজন ততটুকু শসা নিয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিতে হবে। ব্লেন্ডকৃত শসার মধ্যে একটি লেবুর রস দেওয়া যেতে পারে। সেই পেস্টকৃত শসাকে মুখের মধ্যে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৬. অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী

ত্বকের সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে ও তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলো ত্বকের শুষ্কতা বজায় রাখে, ত্বক পরিষ্কার রাখে ও ত্বককে তৈলাক্ততা হতে রক্ষা করে।

একটি অ্যালোভেরা গাছের পাতা নিয়ে সেখান হতে অ্যালোভেরা জেল বের করতে হবে। অ্যালোভেরা জেল বের হয়ে গেলে সেই জেল সরাসরি মুখের মধ্যে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর শুকিয়ে গেলে সেটি ধুয়ে নিতে হবে।

বি: দ্র: আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে বিরত থাকুন। সংবেদনশীলতা বোঝার জন্য অ্যালোভেরা হাতে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, তারপর ধুয়ে নিন। সারাদিনের মধ্যে ত্বকে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখলে তারপর মুখের মধ্যে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।

৭. তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিতে টমেটো ব্যবহার করুন

শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য টমেটোর চেয়ে আর ভালো মাধ্যম হতেই পারে না।ত্বকের মধ্যে জমে থাকা তেল ও ত্বকের লোমকূপে জমে থাকা তেল পরিষ্কার করতে টমেটো দারুণ কার্যকরী। টমেটোর এই গুনের কারণে ত্বকের যত্নে টমেটো অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে।

১টি টমেটো নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে সেই টমেটোর পেস্ট টি মুখের মধ্যে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। ম্যাসাজ শেষে টমেটো এর পেস্ট টি লাগিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণ না শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে গেলে উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তরসমূহ

১. তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কি ব্যবহার করা উচিত?

প্রাকৃতিক বা জেলজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে যেসব ময়েশ্চারাইজারে তেলের পরিমাণ কম।

২. কি খাবার খেলে ত্বক ভালো থাকে?

উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য যেসব খাবার খেতে হবে তা হচ্ছে: গ্রিন টি, গাজর, টমেটো, বাদাম ও কলা।

৩. তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সানস্ক্রিন ভালো হবে?

তৈলাক্ত ত্বকে তেল জাতীয় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বা ওয়াটার জাতীয় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। উক্ত সানস্ক্রিনগুলো ছাড়া অয়েল ফ্রি সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা

তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের সিবাম উৎপাদন কমাতে হবে, লোমকূপে যেসব সিবাম রয়েছে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং সবশেষে মুখে থাকা সিবাম তথা তেলের পরিমাণ কমাতে হবে। যার সবগুলোই আমরা উপরের দিকে আলোচনা করেছি। উপরের কাজগুলো যদি আপনি একাধারে কয়েকমাস করতে পারেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার তৈলাক্ত ত্বক আপনি আগের রূপে ফিরে পাবেন।

Related Post

Leave a Comment