শেরপুর

অতীতে শেরপুর কামরুপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে এর নাম ছিল শেরপুর সার্কেল। জমিদারী আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করেন । কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এ সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায় । ১৯৭৯ সালে শেরপুরকে মহকুমায় রুপান্তর ও ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

নামকরণ

আবুল ফজলের আইন ই আকবরিতে উল্লেখ আছে শেরপুর এলাকা অতীতে দশকাহনিয়া নামে পরিচিত ছিল । প্রবাদ আছে সুদূর অতীতে জামালপুর ও শেরপুরের মধ্যবর্তী বিস্তীর্ন জলমগ্ন অঞ্চল পার হতে দশ কাহন কড়ি পরিশোধ করতে হতো যা দশকাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে ।

আরো পড়ুন : পঞ্চগড় জেলা পরিচিতি : অবস্থান, নামকরণ, জেলা গঠন ও ঐতিহ্য ও স্থাপনা

বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশকাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন । এই শেরআলী গাজীর নামে দশকাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর । তখনও শেরপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জরিপা। বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়ীতে শের আলী গাজীর মাজার এবং নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত ।

সাধারণ তথ্যাবলি

  • প্রতিষ্ঠা : ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
  • সীমানা : উত্তরে মেঘালয়, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলা
  • আয়তন : ১,৩৬৪.৬৭ বর্গ কিমি [সূত্র: BBS
  • জনসংখ্যা : ১৫,০১,৮৫৩ জন সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৬৮.৩% [SVRS 2022] ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১৯০১ ।
  • প্রধান নদনদী > ব্রহ্মপুত্র, ভোগাই, নিতাই, কংশ, সোমেশ্বরী, মহারশি, মালিঝি।

উল্লেখযোগ্য যা কিছুর অবস্থান

  • সদর : অকিড কলাবাগান, গাজীর খামার মাজার শরীফ
  • নকলা : গাজীর দরগাহ, মায়াকুঞ্জ
  • নালিতাবাড়ি : মধুটিলা ইকোপার্ক, রাবার ড্যাম, বঙ্গবন্ধু পার্ক, নাকুগাঁও স্থলবন্দর ।
  • ঝিনাইগাতি : গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র, গারো পাহাড় ও রাবার বাগান।
  • শ্রীবরদী : গড়জরিপা বারদুয়ারী মসজিদ, রাজা পাহাড় ৷

প্রশাসনিক কাঠামো

  • উপজেলা : ৫টি। সদর, নকলা, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী
  • থানা : ৫টি
  • পৌরসভা : ৪টি শেরপুর, নকলা, নালিতাবাড়ি, শ্রীবরদী
  • ইউনিয়ন : ৫২টি
  • জাতীয় সংসদের আসন : ৩টি

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

মোতাসিম বিল্লাহু খুররম (বীর বিক্রম), জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতীক), সৌমিত্র শেখর দে, ডা. নাদেরুজ্জামান খান (বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণপরিষদ সদস্য), সাহিত্যিক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংবাদিক বজলুর রহমান, নারী ক্রিকেটার নিগার সুলতানা জ্যোতি ।

জানেন কি : শেরপুর

  • আয়তনে দেশের : ৪৯তম ময়মনসিংহ বিভাগের ৪র্থ
  • জনসংখ্যায় দেশের : ৪৭তম ময়মনসিংহ বিভাগের ৪র্থ

মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর

সেক্টর > ১১নং

হানাদার বা শত্রুমুক্ত দিবস

  • ৪ ডিসেম্বর : ঝিনাইগাতি
  • ৬ ডিসেম্বর : শ্রীবরদী
  • ৭ ডিসেম্বর : নালিতাবাড়ী ও শেরপুর সদর
  • ৯ ডিসেম্বর : নকলা

গজনী অবকাশ কেন্দ্ৰ

গজনী অবকাশ কেন্দ্র বাংলাদেশের শেরপুর জেলা শহরের ঝিনাইগাতীতে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত । গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে এটি নির্মিত হয়। এটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্ৰ হিসেবে বিবেচিত হয় ।

মধুটিলা ইকোপার্ক

মধুটিলা ইকোপার্ক বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত অন্যতম একটি পরিবেশ-উদ্যান। ১৯৯৯ সালে এ বনকে পরিবেশ-উদ্যান বা ইকোপার্ক ঘোষণা দেওয়া হয়। এ পার্কের আয়তন ৩৮৩ একর ।

তুলশীমালা ধান

শেরপুর জেলার অন্যতম ঐতিহ্য তুলশীমালা সুগন্ধি চাল। ১১ এপ্রিল ২০১৮ জেলা প্রশাসনের আবেদনক্রমে শিল্প মন্ত্রণালয় তুলশীমালা ধানকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা GI পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর দেশের ১৪ তম GI পণ্য হিসেবে ১২ জুন ২০২৩ সনদ ইস্যু করা হয়। তুলসশীমালা ধান আমন মৌসুমে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উচ্চ গুণসম্পন্ন তুলশীমালা চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ ।

Related Post

Leave a Comment