পঞ্চগড়

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শেষপ্রান্তেঅবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পঞ্চগড় রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পঞ্চগড় থেকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ সারাদেশের মানুষের কাছে জেলার প্রধান আকর্ষণ

অবস্থান ও নামকরণ

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড়ের তিনদিকে ভারতের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, পূর্ণিয়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলা। ভারতের সঙ্গে জেলার সীমান্ত এলাকার মোট দৈর্ঘ্য ২৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে এটি পুণ্ড্র রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরো পড়ুন : বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ যত সমুদ্রপথ

তখন এর নাম ছিল ‘পঞ্চনগরী’। কালক্রমে এটি ‘পঞ্চগড়’ নামে পরিচিতি পায়। তবে বহুল প্রচলিত মত হলো, এই অঞ্চলে ৫টি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণে এটির নাম পঞ্চগড় হয়েছে। এই গড়গুলো হলো— ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়।

জেলা গঠন

ব্রিটিশ শাসনামলে এটি জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯১১ সালে জলপাইগুড়িকে পূর্ণাঙ্গ থানা করে সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় পঞ্চগড়ের ‘জগদল’ নামক স্থানে । দেশবিভাগের পর অঞ্চলটি দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমার পাঁচটি থানা— তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে গঠন করা হয়
পঞ্চগড় মহকুমা। এরপর, ১৯৮৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় সালের ১ জেলায় উন্নীত হয় ।

ঐতিহ্য ও স্থাপনা

বাংলাবান্ধা পয়েন্ট ও স্থলবন্দর : বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও স্থলবন্দর দেশের সর্বউত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করতে ১৯৯৭ সালে এটি নির্মিত হয় ।

ভিতরগড় দুর্গ: সদর উপজেলাধীন অমরখানা ইউনিয়নে এর অবস্থান। আয়তনের দিক থেকে এই দুর্গনগরী দেশের সর্ববৃহৎ। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, ১২ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই গড় ও নগরী নির্মাণ করেন প্রাচীন কামরূপের শূদ্র বংশীয় রাজা পৃথু।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ : আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই মসজিদের সম্ভাব্য নির্মাণকাল মোগল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকাল।

বদেশ্বরী মহাপীঠ : বোদা উপজেলায় অবস্থিত চারশ বছরের পুরোনো এই মন্দিরের নামেই উপজেলার নামকরণ হয়েছে।

ডাকবাংলো : তেঁতুলিয়া সদরে অবস্থিত এই ডাকবাংলো নির্মাণ করেন কুচবিহারের রাজা । উপজেলা পরিষদ এখানে পিকনিক কর্নার তৈরি করেছে। এখান থেকে হেমন্ত ও শীতে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ।

গোলকধাম মন্দির : দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নে অবস্থিত মন্দিরটির নির্মাণকাল উনিশ শতক ।

বার আউলিয়ার মাজার : আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে অবস্থিত এই মাজারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এখানে ১৭-১৮ শতকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগত বারো জন আউলিয়ার নাম ।

দেবীগঞ্জ করতোয়া সেতু: ১৯৯৮, সালে চালু এই সেতু হচ্ছে চতুর্থ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু ।

রকস মিউজিয়াম : দেশের একমাত্র পাথরের মিউজিয়ামটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন রং, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের পাথর সংরক্ষিত রয়েছে।

চা শিল্পে পঞ্চগড়

১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফর এসে চা চাষের সম্ভাবনার কথা বলেন। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালে তেঁতুলিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমতলের চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ইতোমধ্যে দেশের মানচিত্রে উত্তরাঞ্চল দ্বিতীয় চা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। মোট উৎপাদিত চায়ের ১৯ শতাংশ আসছে এই জেলাগুলো থেকে। ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের পর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ।

রেল সংযোগে পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন উত্তরবঙ্গের সর্বশেষ রেলওয়ে স্টেশন। পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ চলমান। এটি বাস্তবায়িত হলে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে । তাছাড়া এখান থেকে মংলা বন্দরের সঙ্গেও গড়ে তোলা হবে সরাসরি রেল যোগাযোগ ।

বিশেষ অর্জন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২১ জুলাই এই জেলাকে দেশের প্রথম ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করেন ৷

একনজরে

আয়তন ১৪০৪.৬৩ বর্গ কিমি ৷
জনসংখ্যা ১,১৭৯,৮৪৩ জন (জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২)।
সংসদীয় আসন২টি।
উপজেলা৫টি (তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ) 
নদ-নদীকরতোয়া, ডাহুক, মহানন্দা, তালমা, পাঙ্গা, চাওয়াই ।
নৃগোষ্ঠী রাজবংশী, কোচ, পলিয়া, সাঁওতাল, ওঁরাও, সুনরী ।
জেলা ব্র্যান্ডিংউত্তরের প্রবেশদ্বার, সবুজ চায়ের সমাহার ।

Related Post

Leave a Comment