জামালপুর

১৮৪৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার অধীনে জামালপুর মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৫৫ সালে জামালপুর মহকুমার সিরাজগঞ্জ থানাকে পাবনা জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। ১৮৬৬ সালে রংপুর জেলা হতে দেওয়ানগঞ্জ থানাকে জামালপুর মহকুমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় । ১৮৭৯ সালে টাংগাইল মহকুমা গঠিত হলে মধুপুরসহ বেশ কিছু এলাকা জামালপুর মহকুমা হতে টাংগাইল মহকুমার সাথে যুক্ত হয় ।

১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গের পরে লর্ড কার্জন জামালপুরকে জেলা করার ঘোষণা দেন । ১৯১৭ সালে জামালপুর জেলা গঠনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার জমি অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৮ ময়মনসিংহ থেকে আলাদা করে জামালপুরকে বাংলাদেশের ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ জামালপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয় ।

নামকরণ

অনেকে এ অঞ্চলকে ‘গঞ্জের হাট” নামে উল্লেখ করলেও এ নাম সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় নি । সেন বংশের রাজত্বকালে (১১০০-১২০৩) কৌলিন্য প্রথা প্রচলনের ফলে এ অঞ্চলে হিন্দু বসতি গড়ে উঠে এবং ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ মন্দিরে সাধু-সন্ন্যাসীদের আগমন ঘটে যে কারণে অনেকে জামালপুরের পূর্বনাম ‘সন্ন্যাসীগঞ্জ’ বলে উল্লেখ করেন ।

[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]

আবার ১৭৭৯ সালে সার্ভেয়ার জেনারেল মি. রোলান্ড ভূমি পরিমাপ করে যে মানচিত্র তৈরি করেন সেখানে জামালপুর মৌজার নাম ‘সিংহজানী উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হযরত শাহ জামাল (রহ.) নামে একজন ধর্মপ্রচারক ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে আসেন । ধারণা করা হয়, হযরত শাহ জামাল (রহ.)-এর নামানুসারে এ অঞ্চলের নামকরণ হয় জামালপুর ।

সাধারণ তথ্য

  • প্রতিষ্ঠা : ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৮
  • সীমানা : উত্তরে ভারতের মেঘালয়, কুড়িগ্রাম ও শেরপুর, দক্ষিণে টাঙ্গাইল, পূর্বে শেরপুর ও ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা
  • আয়তন : ২,১১৫.১৬ বর্গ কিমি [সূত্র : BBS]
  • জনসংখ্যা : ২৪,৯৯,৭৩৮ জন
  • সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৬১.৫৩%
  • ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১,১৮২ জন
  • নদনদী > যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ, জিঞ্জিরাম, কয়ড়া, চাতাল, তেঘরিয়া, ঝিনাই প্রভৃতি।

প্রশাসনিক কাঠামো

  • উপজেলা : ৭টি জামালপুর সদর, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি
  • থানা : ৭টি
  • পৌরসভা : ৮টি (৭টি উপজেলাসহ হাজরাবাড়ী)
  • ইউনিয়ন : ৬৮টি
  • জাতীয় সংসদের আসন : ৫টি

উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান

  • সদর : শাহ জামাল (রহ.)-এর মাজার, রাজা হরিশচন্দ্রের দিঘি, শোলাকুড়ি পাহাড় ।
  • বকশীগঞ্জ : ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, গারো পাহাড় ।
  • মেলান্দহ : শাহ কামাল (রহ.)-এর মাজার ।
  • সরিষাবাড়ি : যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, প্রজাপতি পার্ক, দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান।
  • ইসলামপুর : যমুনা নদী ।
  • দেওয়ানগঞ্জ : যমুনা পাড়, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড।
  • মাদারগঞ্জ : ঐতিহ্যবাহী খরকাবিল ।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

  • মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম ও ২নং সেক্টর কমান্ডার)
  • সৈয়দ সদরুজ্জামান (বীরপ্রতীক)
  • মিজানুর রহমান খান (বীরপ্রতীক)
  • আনিছুর রহমান (বীরপ্রতীক)
  • আতিউর রহমান (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর)
  • হাসান হাফিজুর রহমান (কবি ও সাংবাদিক)
  • আব্দুল্লাহ আল মামুন (অভিনেতা ও নাট্যকার)
  • আনোয়ার হোসেন (অভিনেতা)

জানেন কি : জামালপুর জেলা

  • আয়তনে দেশের : ৩১তম
  • জনসংখ্যায় দেশের : ২৭তম
  • ময়মনসিংহ বিভাগের : ৩য়
  • ময়মনসিংহ বিভাগের : ২য়

মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর

  • সেক্টর > ১১নং

হানাদার মুক্ত দিবস—

  • ৫ ডিসেম্বর : বকশীগঞ্জ
  • ৬ ডিসেম্বর : দেওয়ানগঞ্জ
  • ৭ ডিসেম্বর : ইসলামপুর
  • ৯ ডিসেম্বর : মেলান্দহ
  • ১০ ডিসেম্বর : জামালপুর সদর
  • ১২ ডিসেম্বর : মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি

নকশীকাঁথা ও হস্তশিল্প

কাপড়ের ওপর তৈরি নকশা করা কাঁথাই নকশীকাঁথা । আবহমানকাল থেকেই বাংলার বধূরা স্বভাবগতভাবেই বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দৃশ্যগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সুই-সূতার মাধ্যমে কাপড়ের উপর নকশা করে যে কাঁথা বোনেন তাই নকশীকাঁথা । জামালপুরের নকশীকাঁথা সারাদেশে আগে থেকেই প্রশংসিত । গুণগতমান উন্নত এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশ ও দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নকশীকাঁথা শিল্পের জিনিস পত্রাদির মধ্যে রয়েছে— নকশীকাঁথা, বেড কভার, থ্রী-পিছ, ওয়ালমেট, কুশন কভার, শাড়ী, পাঞ্জাবী, টি-শার্ট, ফতুয়া, স্কার্ট, লেডিজ পাঞ্জাবী, ইয়ক, পার্স, বালিশের কভার ইত্যাদি।

Related Post

Leave a Comment