আপনার বাচ্চার প্রথম ৬ মাসে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়া দরকার। জন্মদানের পর আপনি এবং আপনার বাচ্চা ভালো যদি ভালো থাকেন তাহলে প্রথম ঘণ্টা থেকেই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু .করতে পারেন। ফলে আপনার সন্তান মাতৃদুগ্ধ চোষণ করার প্রবৃত্তি নিয়েই জন্মালো।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, কারণ বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর প্রথম কিছুদিনের জন্য আপনার দেহ কোলস্ট্রাম নামক পুষ্টিকর দুধ উৎপাদন করে। যা আপনার বুকের দুধ তৈরী হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাকে পুষ্টি যোগাবে। এটি যখন হয়, তখন তিন থেকে চারদিন পর আপনার স্তন থেকে দুধ বের হয়ে আসে এবং আপনার স্তন বড় এবং দৃঢ় হয়ে ওঠে।
যদি ৬ মাস বয়স থেকে শিশুর পারিবারিক খাদ্যের সাথে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। তবে আপনার বাচ্চার এক বছর পর্যন্ত খাদ্য তালিকায় বুকের দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আপনার বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
৬-৮ মাস হতে পানি খেতে দেয়া যেতে পারে এবং ১২তম মাস থেকে গরুর দুধও দেয়া যেতে পারে। বাচ্চারা ফিডার বা বোতল থেকে খেতে ভালোবাসে। তবে বিশেষজ্ঞরা ১২ মাস বয়সের বেশী বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য চামচ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
জন্মের ঠিক প্রথম এক ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চা প্রথমবারের মতো বুকের দুধ খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। যদিও এই সময়টটিতে আপনি কিছুটা অসুস্থ্য থাকেন। তাই খাওয়ার সময় আপনার এবং বাচ্চার আরাম-আয়েশের ব্যাপারটিতে আপনার ধাত্রী সাহায্য করবেন। প্রথমবার খাওয়ার পর বাচ্চারা প্রায়ই লম্বা ঘুমে চলে যায়।
প্রথমবার সহজভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো না গেলে কোন দুচিন্তা করবেন না। কারণ, বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বেশকিছু পদ্ধতি ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। অনেক নারীই প্রথমে যাদের স্তনদান কঠিন মনে হয়, পরে তারা সফলভাবে এবং সহজেই বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যায়।
খাওয়ানোর আগে আরামদায়ক একটি স্থানে বসা এবং বাচ্চাকে স্তনের কাছাকাছি অবস্থান করানো গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি তাকে খাওয়ানোর জন্য বসবেন, আপনাকে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
স্তন্যপান করানোর জন্য বাচ্চাকে কয়েক উপায়ে ধরতে পারেন। আরামদায়ক অবস্থান খুঁজে পেতে আপনার ধাত্রী আপনাকে সহায়তা করবে। যে উপায়ই আপনি বাছাই করেন না কেন: বাচ্চাকে আপনার কাছাকাছি আগলে ধরুন। বাচ্চাকে আপনার স্তনের মুখোমুখি রাখতে হবে এবং তার মাথা, কাঁধ এবং দেহ সোজাভাবে থাকবে। যাতে করে বাচ্চার বুকের সাথে আপনার বুক মিলে যায়।
আপনার বাচ্চা স্তনের উপর পুরোপুরিভাবে মিশে থাকে না থাকলে সে খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ নাও পেতে পারে। এতে করে আপনার স্তনের বোঁটা ব্যাথা করার সম্ভাবনা থাকে। এটি করার জন্য
যখন বাচ্চা ভালোভাবে আপনার দিকে লেগে থাকবে তখন আপনি লক্ষ্য করবেন স্তনের বৃন্তের কালো অংশ আপনার বাচ্চার নিচের ঠোঁটের নীচে নয় বরং উপরের ঠোঁটের উপরে বেশী দেখা যাবে। এছাড়াও চোষণ পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত, দ্রুত থেকে লম্বা গভীর চোষণে পরিবর্তিত হবে। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেবে।
আপনার স্তনে একটি টানটান অনুভূতি প্রকাশ পাবে। শুরুতে বাচ্চা চোখ বড় করে খুলে প্রশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। খাওয়ানোর শেষের দিকে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে যখন বাচ্চা স্তন ছেড়ে দেবে। আপনার স্তনের বোঁটা নরম ও লম্বা দেখাবে এবং শেষের দিকে গোল দেখাবে। যখন আপনার দুধের সরবরাহ বাড়বে আপনি বাচ্চার ঢোক গেলার শব্দ শুনবেন।
বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর প্রথম ৮-১০ দিন আপনার স্তন ব্যাথা করতে পারে। আপনি এটা বুঝতে পারবেন যখন আপনি গোসল করবেন অথবা যখন স্তনের সাথে কাপড়ের ঘর্ষণ হবে। তবে আপনি যদি বাচ্চাকে নিয়মিত দুধ পান করানা, খুব শীঘ্রই আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে পরবেন।
আমার যদি হেপাটাইটিস বি থাকে তাহলে কি আমি বুকের দুধ খাওয়াতে পারি?
হ্যাঁ, আপনি নিরাপদেই খাওয়াতে পারেন। যদি আপনার বাচ্চা জন্মের পর ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশান এবং হেপাটাইটিস বি টিকা নিয়ে থাকে।
আমার যদি HIV থাকে তাহলে কি আমি বুকের দুধ খাওয়াতে পারি?
HIV পজিটিভ মহিলাদের বুকের দুধ না খাওয়াতে উপদেশ দেয়া হয়। বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে এইচআইভি বাচ্চার শরীরে প্রবেশের ঝুঁকি থাকে।
বুকের দুধ খাওয়ানো অনেক সময় বেশি ঝামেলার হতে পারে। তবে উপরের নির্দেশনাগুলো অনুশীলন করলে এই ঝামেলা আপনি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। আপনার বাচ্চা কিভাবে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে তা খেয়াল রাখুন এবং সেই মত করে তার পরিচর্যা করুন।
Leave a Comment