islamic Study

ড. রফিক একজন বিজ্ঞানী। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, মুসলমানদের বিভিন্ন ইবাদত পালনের জন্য বিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। নামাজ আদায় করার জন্য সময় এবং দিক নির্ণয়ের জ্ঞান থাকতে হয়, রোজা পালনের জন্য দিন রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। উক্ত সম্মেলনে জনাব ড. সাখাওয়াত বলেন, মুসলমানদেরকে আল্লাহ্, সৃষ্টিজগত এবং আত্মার পরিচয় জানা দরকার; যাতে যুক্তিনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে নিজের ধর্মকে তুলে ধরতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষগণ তাই করেছিলেন বলে ইসলামের অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে।

  • ইমাম গাজজালির প্রধান পরিচয় কী?
  • ‘বাংলাদেশে পির ও অলি দরবেশগণের মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে’— ব্যাখ্যা করো।
  • উদ্দীপকে বর্ণিত ড. রফিকের বক্তব্যে বিজ্ঞানের কোন শাখাটির কথা বলা হয়েছে? মূল্যায়ন করো।
  • ড. সাখাওয়াতের বক্তব্যে যে বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে তার উৎকর্ষ সাধনে মুসলিম মনীষীদের অবদান মূল্যায়ন করো।

প্রশ্নের উত্তর

ক. ইমাম গাজজালির (র) প্রধান পরিচয় হলো, তিনি একজন প্রখ্যাত মুসলিম মনীষী ও সুফি দার্শনিক।

খ. বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে পির-মাশায়েখ ও অলি- দরবেশগণের অবদান অপরিসীম।

বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছিল পির- মাশায়েখ ও অলি-দরবেশগণের মাধ্যমে। যুগে যুগে এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক বিখ্যাত আলেম-উলামা, পির-মাশায়েখ, অলি- দরবেশ। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে অতীতে বাংলাদেশে এসেছেন বহু সুফি-সাধক। তারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাওহিদ, রিসালাত, ইবাদত, ও নৈতিকতার মর্মবাণী । তাদের কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলায় ইসলামের বাণী ছড়িয়ে পড়ে।

[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ড. রফিকের বক্তব্যে বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা ভূগোলশাস্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

মানুষের বসবাসের জগৎ এবং এর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়ে ভূগোলে আলোচনা করা হয়। আবহাওয়া, জলবায়ু, বায়ুমণ্ডল, ভূ-পৃষ্ঠ, সময়, দিক, দিন-রাত্রির আবর্তন প্রভৃতি ভূগোলের আলোচ্য বিষয়; যা ড. রফিকের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ।

উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজ্ঞান বিষয়ক এক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিজ্ঞানী ড. রফিক বলেছেন— মুসলমানদের বিভিন্ন ইবাদত পালনের জন্য বিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। নামাজ আদায় করার জন্য সময় এবং দিক নির্ণয়ের জ্ঞান থাকতে হয়। রোজা পালনের জন্য দিন- রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়।

ড. রফিকের এ বক্তব্যের সাথে ভূগোলের বিষয়বস্তুর মিল রয়েছে। মুসলমানদের কেবলা নির্ধারণ, নামাজের সঠিক সময় এবং রোজার সেহরি ও ইফতার সঠিক সময়ে করার জন্য ভূগোলশাস্ত্রের জ্ঞান অপরিহার্য। তাই বলা যায়, ড. রফিকের বক্তব্যে ভূগোলশাস্ত্রের কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ড. সাখাওয়াতের বক্তব্যে দর্শনশাস্ত্রের উল্লেখ করা হয়েছে।

জীবন ও জগতের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার নাম দর্শন । স্রষ্টা, সৃষ্টিজগত, আত্মা প্রভৃতি দর্শনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়; যা ড. সাখাওয়াতের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকের ড. সাখাওয়াত এক সম্মেলনে বলেন- মুসলমানদেরকে আল্লাহ্, সৃষ্টিজগত এবং আত্মার পরিচয় জানা দরকার; যাতে যুক্তিনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে নিজের ধর্মকে তুলে ধরতে পারে। তার এ বক্তব্যে দর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। দর্শনের উৎকর্ষ সাধনে মধ্যযুগের মুসলিম মনীষীদের অবদান অপরিসীম। যেমন— ‘ফালাসিফা’ গোষ্ঠীর প্রবর্তক আল-কিন্দি ‘এরিস্টটলের ধর্মতত্ত্ব’ (Theology of Aristotle) আরবিতে অনুবাদ করেন। তাকে ‘আরব জাতির দার্শনিক’ বলা হয়।

আল-ফারাবি এরিস্টটলের দর্শনের সাথে প্লেটোর দর্শনের সমন্বয় সাধন করেন এবং এরিস্টটলের ওপর প্রায় পঞ্চাশটি গ্রন্থ রচনা করেন। ইবনে সিনা ধর্ম ও দর্শনকে আলাদা করে দেখান এবং প্রমাণ করেন, দর্শন কেবল তাত্ত্বিক আলোচনা নয় বরং এর প্রায়োগিক মূল্যও আছে। আল- গাজজালি (র) দর্শনের মাধ্যমে আল্লাহভীতির পুনঃপ্রবর্তন করেন। তার প্রচেষ্টায় সুফিবাদ ইসলামের অন্যতম মতবাদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

ইবন রুশদ এরিস্টটলীয় দর্শনের মূলতত্ত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা কারণ এবং তিনি ধর্ম ও দর্শনকে অভিন্ন বিষয় বলে মনে করেন। আল্লামা ইকবাল দেখিয়েছেন যে, সংসার থেকে পালিয়ে নয় বরং জীবনসংগ্রামেই আত্মা মোহমুক্ত হয় ।

পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম মনীষীরা এসব কাজের মাধ্যমে দর্শনে উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

Related Post

Leave a Comment